মানবদেহের মস্তিষ্কঃ বিস্ময়কর সব তথ্য

3149

ব্রেইন বা মস্তিষ্কঃ

হল সকল প্রাণীর সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম। সহজ ভাষায়, প্রাণীদেহের সব কাজ,চিন্তা-ভাবনা,নড়া-চড়া সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেইন। একজন মানুষের ব্রেইন,অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বড় হয়। মানুষের মস্তিষ্ক অসাধারণ রহস্যময় সৃষ্টি। এর ক্ষমতার সীমা পরিসীমা বিজ্ঞানীরা আজও নির্ণয় করতে পারেননি।

মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ

মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বিস্ময়কর ক্ষমতা হলো বাস্তবের কোনো ঘটনার গভীরে গিয়ে তার বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কাল্পনিক চিত্র তৈরি করা। যা নিকট ভবিষ্যতে ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে...। বিজ্ঞানীরা আজো সঠিকভাবে আবিষ্কার করতে পারেন নি আমরা কেনো স্বপ্ন দেখি? কেনো দিনের বেলার অসমাপ্ত কাজগুলো রাতে সাদাকালো চিত্রে রূপ নেয়? এটাই মানব মস্তিষ্কের সবচে রহস্যময় ঘটনা।

মস্তিষ্কের আরও একটি অবাক  করা ব্যাপার বলি। আমাদের মস্তিষ্কের ভর ৫.১-৫০ কেজি হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা মাত্র ১ গ্রাম এর মত অনুভব করে থাকি। বলতে পারেন কেন?

কেননা আমাদের মস্তিষ্কের বেশীরভাগ পানি কিংবা তরল জাতীয় পদার্থ। আর সেই তরলে অনেকটা ভাসমান থাকে আমাদের মস্তিষ্ক। তাই আর্কিমিডিসের সূত্রানুসারে আমরা মাত্র ৫০ গ্রামের মত ওজন কিংবা ভর অনুভব করে থাকি। অনেক সময় নানা কারণে বিশেষ করে অনেক পরিশ্রম করলে আমরা আমাদের মাথা অনেক ভারী অনুভব করি। এর কারণ মস্তিষ্কে পানির পরিমাণ কমে যাওয়া। তাই সবসময় বেশি করে পানি পান করবেন।

মস্তিষ্ক
মস্তিষ্ক

আসুন জেনে নিই মস্তিষ্ক নিয়ে আরো সব তথ্য:

  • বাচ্চা অবস্থায় একটি মানুষের মস্তিষ্কের ওজন থাকে ৩৫০-৪০০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় যা বেড়ে হয় ১৩০০-১৪০০ গ্রাম!
  • মানব মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫ ভাগই পানি!!!
  • মস্তিষ্ক মানুষের দেহের মোট আয়তনের মাত্র ২% হলেও দেহে উৎপন্ন মোট শক্তির ২০ ভাগেরও বেশী খরচ করে সে একাই!! আশ্চর্য না?
  • একজন সাধারণের মানুষের মস্তিষ্কে থাকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬ গুণ।
  • শুধুমাত্র নিউরোকর্টেক্স অংশ (যা মানুষের ভাষা,কথা বার্তা নিয়ন্ত্রণ করে) ব্রেনের মোট ভরের প্রায় ৭৬ ভাগ। আর মানুষের নিউরোকর্টেক্স অন্যান্য সকল প্রাণীর চেয়ে বড় হয়। গঠনও অনেকখানি আলাদা হয়। যদিও অন্য সকল বেশ কিছু ক্ষেত্রে মানুষের সাথে অন্যান্য প্রাণীর মস্তিষ্কের গঠনে বেশ মিল আছে।
  • প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে সময় একটি মানব শিশুর মস্তিষ্কে প্রতি মিনিটে ২৫০,০০০ নিউরণ সৃষ্টি হতে থাকে।
  • মস্তিষ্কের মধ্যে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৭৫০ মিলিলিটার রক্ত সঞ্চালিত হয়। যা হৃৎপিণ্ড থেকে সঞ্চালিত রক্তের প্রায় ২০%।
  • জাগ্রত থাকা অবস্থায় মস্তিষ্ক প্রায় ২৫ ওয়াট পাওয়ার সৃষ্টি করে। যা একটি লাইট বাল্ব জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট।
  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক অক্সিজেন ছাড়া মাত্র ৫ মিনিট টিকতে পারবে।
  • মানুষের মস্তিষ্কের প্রতি সেকেন্ডে ১০১৫ টি হিসাব করার ক্ষমতা আছে। যা পৃথিবীর সবচে বড় সুপার কম্পিউটারেরও নেই...!!
  • মানুষের নিউরণে তথ্য চলাচলের সর্বনিম্ন গতিবেগ হলো ৪১৬ কিমি/ঘণ্টা অর্থাৎ প্রায় ২৬০ মাইল/ঘণ্টা। আর বর্তমান বিশ্বে সবচে দ্রুততম গাড়ি "বুগাত্তি ভেরন ই.বি ১৬.৪" এর গতিবেগ ২৫৩ মাইল/ঘন্টা।
  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন প্রায় ৭০০০০ বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে সক্ষম।
  • ৩০ বছর বয়সের পর থেকে মানুষের মস্তিষ্কের ভর প্রতি বছর ০.২৫% করে বাড়তে থাকে।
  • সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ভর ছিলো ১২৭৫ গ্রাম। যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম।
  • মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা কেমন হতে পারে! সাধারণ একটা মস্তিষ্ক এনস্লাইকোপিডিয়া ব্রিটানিকার ৫ গুণ বেশি তথ্য ধারণ করতে পারবে। এই ধারণ ক্ষমতা ইলেক্ট্রিকালি বুঝাতে গেলে ৩ থেকে ১০০০ টেরাবাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

লিখাটি নিয়ে আপনার অভিমত কি?