একটু অন্যরকম ভাবনা বদলে দিতে পারে অনেক কিছুই ( দুনিয়া বদলে দেয়া প্রযুক্তি, বদলেছে মানুষকেও )

অনেক ভালো একটি লিখা। দেখে অনেক ভালো লাগলো। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

কিছুকে বদলে দেয়া সহজ নয়। আমরা প্রায়ই সমাজকে বদলে দেয়ার কথা বলি, কিন্তু সমাজের কথা বাদ দিন, নিজেকেই বদলাতে পারি ক’জন? আসুন, আজ আমরা পরিচিত হই এমন ১০টি ওয়েব সাইটের সঙ্গে যারা কেবল ইন্টারনেটকেই নয়, বদলে দিয়েছে পৃথিবীকেও।

উইকিপেডিয়া বদলে দিয়েছে তথ্য অনুসন্ধানের ধরনকে।

উইকিপেডিয়ার আগেও অনলাইন বিশ্বকোষ ছিল, তবে সেগুলোতে হয় তেমন কোনো তথ্য থাকত না, অথবা তথ্য থাকলেও পয়সার বিনিময়ে সে তথ্য পেতে হত। উইকিপেডিয়া বদলে দিল এটি, এখন আমরা যে কেবল বিনা পয়সাতেই সব বিষয়ে জানতে পারি তাই নয়, নিজেরাও হতে পারি তথ্যের জোগানদাতা আর নির্মাতা। সব মানুষের অংশীদারিত্বে তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার মাধ্যমে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা আর নিভুর্লতাকেও অনেকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে উইকিপেডিয়া।

আমাজন.কম বদলে দিয়েছে পণ্য ক্রয়ের ধরন।

আমাজনের আগেও অনলাইনে কেনাকাটা ছিল, তবে আমাজনের মত ছিল না কেউই। কেবল বই আর সম্পর্কিত আইটেম বিক্রি দিয়ে শুরু করে আজ আমাজন অনলাইনে বিক্রি করছে কোটি কোটি পণ্য, হয় নিজে অথবা অংশীদারি বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে। এছাড়া বিক্রিত পণ্য শিপমেন্ট তথা ক্রেতার হাতে পৌছে দেয়ার যে স্ট্যান্ডার্ড আমাজন দাঁড় করিয়েছে আজ কমবেশি তাকেই অনুসরণ করছে অন্য অনলাইন রিটেইলাররা।

হটমেইল বদলে দিয়েছে ইমেইল করার ধরন।

হটমেইলের আবির্ভাবের আগে ইমেইল ব্যাপারটা ছিল একটামাত্র কম্পিউটারের সীমানাতেই বন্দী। মেইল পাঠানো বা রিসিভ করা ঐ কম্পিউটার থেকেই করতে হত। হটমেইল ওয়েব মেইলের ধারণা চালু করে এই বন্দিত্ব থেকে মুক্তি দিল আমাদের। ইন্টারনেট কানেকশন আছে এমন যে কোনো কম্পিউটার থেকেই মেইল গ্রহণ বা প্রেরণ করা সম্ভব হল। বর্তমানে হটমেইলের পথ ধরেই কাজ করে চলেছে আরো শত শত ওয়েব মেইল সেবাদাতা।

ফেসবুক বদলে দিয়েছে বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর সম্পর্ক আর বন্ধন।

ফেসবুকই সর্বপ্রথম সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট নয়, কিন্তু নিঃসন্দেহে ফেসবুকে এমন কিছু আছে যা অন্য কোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে নেই। এ কারণে ফেসবুকের সদস্য সংখ্যা আজ ৪০ কোটি! কেবল বন্ধুই নয়, প্রিয় ব্যান্ড, প্রিয় নায়ক নায়িকা, প্রিয় সংগঠন বা প্রিয় দল ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ফেসবুকের দিকে হাত বাড়িয়ে রেখেছে সবাই। বর্তমানে পড়ালেখা, বিনোদন, ব্যবসা বা চাকুরি সব কাজেই কোনো না কোনোভাবে ফেসবুককে ব্যবহার করছে কোটি কোটি মানুষ।

প্রজেক্ট গুটেনবার্গ বদলে দিয়েছে পড়ার ধরনকে।

প্রজেক্ট গুটেনবার্গ হচ্ছে এক বিশাল অনলাইন গ্রন্থাগার, যেখান থেকে আমরা পড়তে পারি মনের মত সব বই, বিনে পয়সায়। প্রজেক্ট গুটেনবার্গই প্রথম ই-বুক তৈরি করেছে এবং বিনে পয়সায় পৌঁছে দিয়েছে সবার কাছে। আজ কোটি কোটি মানুষ কপিরাইটের আওতামুক্ত প্রায় সব বই-ই পড়তে পারছে প্রজেক্ট গুটেনবার্গে, একাধিক ভাষায়। বলা যায়, প্রজেক্ট গুটেনবার্গের আবির্ভাব না ঘটলে ই-বুক আজকের জায়গায় পৌঁছাতে পারত না।

টুইটার বদলে দিয়েছে যোগাযোগের ধরনকে

সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে টুইটার। মাত্র ১৪০ অক্ষরের বার্তার মাধ্যমে মানুষ একে অন্যের সঙ্গে এমনভাবে যোগাযোগ করে চলেছে, আজ থেকে বছর দশেক আগে হলেও যেটাকে অবিশ্বাস্য লাগত। কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয়, ব্যবসা বাণিজ্য বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যোগাযোগকেও অন্য একটা স্তরে নিয়ে গেছে টুইটার। টুইটারে কোনো কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিসের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে, দেখা যাবে খুব দ্রুত ঐ কোম্পানির পক্ষ থেকে মেসেজ এসে গেছে এবং সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপও নেয়া হযেছে। কোটি কোটি মানুষের মন জয় করে এভাবেই এগিয়ে চলেছে টুইটার।

প্যানডোরা বদলে দিয়েছে মিউজিক অনুসন্ধান

প্যানডোরার আবির্ভাবের আগে অনলাইনে মিউজিক শুনতে হলে কোনো স্ট্রিমিং রেডিও স্টেশনে গিয়ে আগে থেকে প্রোগ্রাম করা মিউজিক শুনতে হত। এতে বেশির ভাগ সময়ই পছন্দের মিউজিক শোনা সম্ভব হত না। প্যানডোরা পাল্টে দিল এটাকে। এখন প্যানডোরায় নিজের রেডিও স্টেশন নিজেই প্রোগ্রাম করা যায়, গানের বা গায়কের নাম দিয়ে গানটা বাজাতে বললেই হল। খুব অল্প পরিমাণ ইউজার ইনপুটকে কাজে লাগিয়ে প্যানডোরা খুবই সন্তোষজনক প্লেলিস্ট তৈরি করতে পারে, যাতে প্রতিফলিত হয় শ্রোতার পছন্দ-অপছন্দ।
ইউটিউব বদলে দিয়েছে বিনোদনকে

ইউটিউব জন্ম নেয়ার আগে অনলাইনে মনের মত ভিডিও দেখার তেমন কোনো উপায় ছিল না। ইউটিউব এসেই নিজের ইচ্ছেমত ভিডিও পোস্ট করা এবং দেখার স্বাধীনতা দিল সবাইকে, ওটা কপিরাইট করা এবং দশ মিনিটের বেশি লম্বা না হলেই হল। ওয়েব ব্যবহারকারীরা বর্তমানে এক জায়গা থেকেই নিজের খেয়ালখুশিমত অনলাইনে ভিডিও দেখতে পারে। আরো অনেক কোম্পনি ইউটিউবের পদাঙ্ক অনুসরণ করায় এখন অনলাইনে ভিডিও দেখা হয়ে গেছে রীতিমত ডালভাত।

গুগল বদলে দিয়েছে সবকিছুই!

কথাটা শুনে একটু বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, কিন্তু এটা সত্যি। ইন্টারনেটের এমন কোনো এলাকা বাদ নেই যেখানে গুগলের হাতের ছোঁয়া পড়েনি। আপনি অনলাইনে যাই করুন না কেন, গুগলের কোনো না কোনো সার্ভিসের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। আমরা যে যে পেশা বা অবস্থাতেই থাকি না কেন, অনলাইন দুনিয়ায় গুগলের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে বাঁচা খুবই কঠিন। ব্লগারের ব্লগ হোক, পিকাসা-ফটো অ্যালবাম হোক, হোক গুগুল সার্চ, অথবা জিমেইল ব্যবহার অথবা ইউটিউবে ভিডিও দেখা, গুগল আছে সব জায়গাতেই।

এখানে একটা মজার ব্যপার লক্ষ করেছেন হয়তবা। এদের বেশিরভাগই নতুন কোন ‍কিছু করেনি। এমন নয় যে তারা অসাধারণ কোন কিছু আবিস্কার করে বিখ্যাত হয়েছে। তারা যেটা করেছে, প্রচলিত পন্থাগুলোতেই হেটেছে, তবে নিজেদের মত করে। এটাই হতে পারে উন্নতির মূলমন্ত্র। অনেকে অনেক কিছু করে ফেলেছে। তাই বলে কি আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন? সবাই তো সব কিছু করে ফেলেছে, আমি কি করব!

এই কথা্ বলার দিন শেষ। আমরা এখন অনেক বড় এক বাজারের সামনে দাড়িয়ে আছি। আমরা যাই করি না কেন তার সাম্ভাব্য ক্রেতা বা অডিয়েন্স হাজারে নয়, লাখে নয়, শত কোটিতে। তাই যে কোনকিছু মানসম্পন্যভাবে করতে পারলে আমরা একদল অডিয়েন্স. একদল আগ্রহী মানুষ ‍পেয়ে যাই, যারা দেখতে চায়, আমরা কি করতে পারি, কতটুকু করতে পারি। প্রচলিত যে কোন কিছু আমরা আমাদের মত করে শুরু করতে পারি, একদম আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। নিশ্চিৎ থাকতে পারেন, একদল আগ্রহী মানুষ পেয়ে যাবেন আপনি, যারা আপনার জন্য অপেক্ষা করবে, আপনি কি করলেন, কিভাবে করলেন তা দেখবার জন্য, মানসম্পন্যভাবে করতে পারলে তারা আপনার কষ্টকে মূল্যায়িত করবে আপনার সেবা গ্রহন করে। বসে থাকা কেন? সুযোগ কি আমাদের সামনে হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে না?

লিখাটি http://www.tech.net.bd/istiakmahmud/2011/02/the-stuff-that-changes-the-world/ থেকে নেয়া।

লিখাটি নিয়ে আপনার অভিমত কি?