পানিতে বসবাসকারী শিকারী প্রানীগুলোর মধ্যে হাঙ্গরই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। হিংস্রতার দিক দিয়েও এর তুলনা হয় না। হাঙ্গর কি আসলেই বিপজ্জনক? গবেষকরা বলে থাকেন, কোন হাঙ্গর যেটি ৬ ফিট এর বেশি লম্বা সেটি মানুষের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কারন এটি আকারে বড়, সুগঠিত চোয়াল এবং শক্ত দাঁতের অধিকারী। মূলত গ্রেইট হোয়াইট এবং বুল শার্ক জাতীয় হাঙ্গরগুলো ছাড়া অন্যান্য হাঙ্গরগুলো মানুষ থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করে। এবার আসা যাক কোন কোন হাঙ্গরগুলো আপনার সমূদ্র স্নান দূঃস্বপ্নে পরিনত করতে পারে।
১. শর্টফিন ম্যাকাওঃ
সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন এই হাঙ্গর অনেক সময় মাছ ধরার নৌকা আক্রমন করে থাকে। এর এক কামড়ে একটি নৌকা যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাতে এটি ডুবে যেতে ২-৩ মিনিট সময় লাগে। এই জন্য শর্টফিন ম্যাকাও জেলেদের জন্য সবচেয়ে
বিপজ্জনক হাঙ্গর। অনেক সময় জেলেরাও এর জন্য বিপজ্জনক। ম্যাকাও যদি কখনো বর্শিতে আটকা পড়ে তখন এটি খুবই আক্রমনাত্নক হয়ে ওঠে। এটি সাধারনত গভীর পানিতে বাস করে। আর তাই তীরে সাঁতার কাটা সাঁতারুদের চাইতে জেলে অথবা ডুবুরিদের এর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি থাকে।
২. ওশানিক হোয়াইটটিপঃ
হোয়াইটটিপ সাগরতলের বড় প্রানীগুলোর মধ্যে একটি। যদিও এটি মানুষকে আক্রমন করার ইতিহাস খুব একটা নেই। যখন কোন যুদ্ধের নৌযান শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ডুবে যায়, তখন গভীর পানিতে থাকা এই হাঙ্গর অনেক সময়
যোদ্ধাদের শত্রু হয়ে ওঠে। এটি যখন শিকার ধরে তখন অন্য কোন দিকে খেয়াল থাকে না। এই জন্যই মূলত একে বিপজ্জনক হাঙ্গর এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৩. টাইগার শার্কঃ
মানুষের বদলে টাইগার শার্ক মূলত জুতা, টিনের কৌটা, ব্যাগ, সিগারেটের প্যাকেট এগুলো খেতেই বেশি পছন্দ করে। কারন এর পেটে প্রায়ই এগুলো পাওয়া যায়। যেখানে অন্যান্য হাঙ্গররা কোন মানুষ পেলে হয়ত একটি কামড় দিয়ে দেখবে এটি খাওয়ার যোগ্য কিনা, সেখানে টাইগার শার্ক এক কামড় দিয়ে কোন মতেই ছেড়ে দেবেনা। আর এটি যদি একবার
খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেটি কারো জন্যই খুব একটা সুখকর হবেনা। এর চোয়ালে ইলাস্টিক পেশী রয়েছে। যার কারনে এটি স্বাভাবিক এর চাইতে বড় কামড় দিতে পারে। এটির ক্ষুরের মত ধারালো শক্ত দাঁতের কাছে যেকোন কিছু হার মানতে বাধ্য। অনেক সময় এটি শক্ত খোলসে ঢাকা সামদ্রিক কচ্ছপ খেতেও দ্বিধা করে না।
৪. বুল শার্কঃ
এর নাম থেকেই এর স্বভাব সম্পর্কে ধারনা করা যাচ্ছে। ষাঁড়ের মত আক্রমন করতেই এরা বেশি পছন্দ করে। বুল শার্ক দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এক ব্যক্তি এটিকে ট্রাক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সাথে তুলনা করেছেন।
মিঠা পানি এবং লবনাক্ত পানি সবখানেই এদের দেখা যায়। স্বাধারনত তীরের কাছের অগভীর পানিতেই এদের বেশি পাওয়া যায়।
৫. গ্রেইট হোয়াইটঃ
হোয়াইট বলা হলেও গ্রেইট হোয়াইট কিন্তু পুরপুরি সাদা নয়। এর পেটের দিকটি সাদা এবং পিঠের দিকটি গাড় ধূসর রঙের হয়ে থাকে। ‘মাইন্ডলেস কিলিং মেশিন’ নামে পরিচিত গ্রেইট হোয়াইট শার্ক সম্পর্কে প্রায় সবাই জানে। এটি মানুষের প্রতি খুবই আগ্রহী এবং কামড় দিয়ে পরখ করে দেখে এটিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করা যায় কিনা। মানুষ এবং নৌযানে আক্রমন করার
কুখ্যাতি রয়েছে এর অনেক। যদিও অনেক গবেষকরা বলে থাকেন পানির নিচ থেকে সার্ফ বোর্ডকে দেখতে সীল মাছের মত দেখায় বিধায় এটি ভুল করে সার্ফ বোর্ড আক্রমন করে। তবে মানুষের চাইতে সীল মাছের চর্বিযুক্ত নরম মাংসই এদের বেশি পছন্দ। এটি এক কামড়ে ৯ থেকে ১৪ কেজি মাংস মুখে পুরে ফেলতে পারে। ৫ কিলোমিটার দূর থেকে সামান্য রক্তের আভাস পেলে এটি ছুটে আসতে পারে।
আপনারা যারা ‘Jaws’ অথবা ‘Deep Blue Sea’ এর মত হাঙ্গরের মুভি দেখেছেন তারা এর আক্রমন এবং ধংস ক্ষমতা সম্পর্কে সহজেই ধারনা করতে পারেন। মুভিতে যতটুকু দেখানো হয়েছে বাস্তবে হাঙ্গর কিন্তু এর চাইতে কম বিপজ্জনক নয়।
লেখাটি এখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।