শিলাবৃষ্টি:
ঘরে বসে শিলাবৃষ্টি দেখা অনেকের কাছেই অনেক মজার মনে হয় তাই না ?? আমার ও মনে হতো। কিন্তু গত বছর একবার বাস এ করে বাড়ি ফেরার সময় শিলাবৃষ্টির পাল্লায় পরে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। মজার আর অদ্ভুত হলেও শিলাবৃষ্টি বেশ ভয়ঙ্করও বটে ।
শিলা বৃষ্টি নিয়ে আজ তাই কিছু তথ্য নিয়ে এই লেখাঃ
- গড়ে একটা শিলার ব্যস হয় ৫ থেকে ১৫০ মিলিমিটার এর মধ্যে ।
- শিলাবৃষ্টি কে ইংরেজি তে বলা হয় 'Hail storm', যদিও এটাকে ঠিক ঝড় বলা যায় না, এটা আসলে বজ্র- বৃষ্টির মত বড় কোনো ঝড়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া । আসলে, শিলাবৃষ্টি তৈরী-ই হয় ঝড়ের মেঘ থেকে।
- শিলাবৃষ্টি যে মেঘ থেকে তৈরী হয় তাকে বলে 'Cumulonimbus clouds'
- যুক্তরাজ্যের কলোরেডোতে এর বাসিন্দারা রীতিমতো শিলাবৃষ্টির একটা ঋতুই পায়, যাকে 'Hail storm season' বলে, যা প্রায় মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয় !!
- সাধারণত শিলাবৃষ্টির স্থায়িত্ব ১৫ মিনিটের বেশি হয় না। এর থেকে বেশি সময় ধরে শিলাবৃষ্টি হওয়ার রেকর্ড খুব-ই কম ।
- পুরো পৃথিবীর আবহাওয়া অধিদপ্তর গুলোর সুত্রে, কোনো শিলার ব্যস যদি ন্যুনতম ৩/৪ ইঞ্চি না হয়, তাহলে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না।
- শীতপ্রধান দেশগুলোর তুলনায় পার্বত্য অঞ্চল গুলোতে শিলাবৃষ্টি বেশি হয় ।
এই তো গেল শিলাবৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য, কিন্তু এই যে আকাশ থেকে বরফের টুকরো পড়ে, এটা কিভাবে সম্ভব হয়? স্বভাবতই সবার মনে এ প্রশ্ন জাগে।
শিলাবৃষ্টি আসলে কিভাবে হয় ?! শিলাই বা কিভাবে সৃষ্টি হয় ?
শিলা কিভাবে সৃষ্টি হয়?
ঝড়ো আর সংকটপূর্ণ আবহাওয়াতে যখন শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ উপরের দিকে উঠতে থাকে, তখন শিলা তৈরী হয়। যখন ' convective cell ' [*এ সম্পর্কে নিচে পাদটীকায় দেয়া আছে] তৈরী হয়, তখন উষ্ণ বায়ু উপরের দিকে উঠতে থাকে, আর শীতল বায়ু নিচের দিকে নামতে থাকে। যখন সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ খুব শীতল পানির উৎস পাওয়া যায়, তখন মেঘে বরফ জমতে থাকে ঐ শীতল পানির দানা আর শীতল বায়ুর সংমিশ্রণে ।
উর্ধ্বমুখী বায়ু এমন একটা অবস্থানে পৌছায় যেখানে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে চলে যায়, অর্থাৎ যেখানে পানি বরফ হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুতে সৃষ্ট বরফ খণ্ডগুলো ঐ বায়ুর প্রবাহ থেকে ছুটে গিয়ে নিচের দিকে পড়তে থাকে। এই ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর উপরে উঠে যাওয়ার পরে বরফ কণা সৃষ্টি হয়ে নিম্নগামী হওয়ার প্রক্রিয়া পুনঃ পুনঃ চলতে থাকে এবং বরফ কণার উপর বার বার আস্তরণ জমা হয়ে তা বরফ খণ্ডের আকার নেয়। এই ঊর্ধ্বমুখী বাতাসের কিন্তু বেশ ভালোই গতি থাকতে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গতি ৬০ মাইল/ঘন্টা ও হতে পারে।
মজার ব্যাপার হল, আমরা যদি একটা শিলা খন্ড-কে অর্ধেক করে কেটে নিতে পারি, তাহলে এর ভেতরকার কেন্দ্রিভূত স্তরগুলো আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে । যখন শিলা ঊর্ধ্বাকাশ থেকে পতিত হতে থাকে, তখন এটি পতনশীল অবস্থায় কিছুটা গলে যায়, আর এমন তাপমাত্রায় এটা গলে যার কারণে এটা আবার ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর সাথে উপরে উঠে যায়। সুতরাং ,এর থেকেই বোঝা যায় যে খুব বড় আকারের শিলাখন্ড আসলে অনেক বারের পুনঃ প্রক্রিয়ার ফসল।
এই শিলাখন্ড গুলো বৃষ্টির পানির কণা বা মেঘ কে আশ্রয় করে এবং যখন এগুলো ক্রমশ ভারি হয়ে উঠে এবং ঊর্ধ্বগামী বায়ু আর এতটা ভারি কণা বহন করতে পারে না,তখন শিলাখন্ড বৃষ্টির সাথে ভূমিতে পতিত হতে থাকে। যাকে আমরা শিলাবৃষ্টি হিসেবে দেখতে পাই।
পাদটীকাঃ
[*] Convection cell:
convection cell প্রবাহী পদার্থের ক্ষেত্রে হয়, যখন তরল অথবা গ্যাসীয় পদার্থের ঘনত্বে পার্থক্য দেখা দেয়। যখন নির্দিষ্ট প্রবাহীকে তাপ প্রয়োগ করা হয়, এর আয়তন বেড়ে যায় এবং ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে এবং ঐ আয়তনের তরলের প্লবতা এর আশেপাশের অঞ্চলের প্রবাহীর তুলনায় বেড়ে যায়। তখন শীতলতর ও কম ঘন প্রবাহী, উষ্ণ ও ঘন প্রবাহীর নিম্ন অঞ্চলে আশ্রয় নেয় এবং একে উপরের দিকে উঠার জন্য বল প্রয়োগ করে। গতীয় এ প্রক্রিয়াকেই বলে convection এবং চলমান প্রবাহী পদার্থটিকে বলে convection cell.
বাসে বাড়ি ফেরার সময় শিলাবৃষ্টির পাল্লায় পড়ার কথা আমারও মনে পড়ে, বাংলাদেশে শিলাবৃষ্টি যেহেতু খুব বেশী হয় না, অমন ঘটনা ভুলতে সময় লাগবে 🙂 সেবার প্রায় ৮-১০ বছর পরে শিলাবৃষ্টির মুখোমুখি হয়েছিলাম 🙂