আমরা পৃথিবী নামক একটি গ্রহে বাস করছি।আমাদের পৃথিবী, আরও ৭ টি গ্রহ ও তাদের শতাধিক উপগ্রহ, সূর্য নামক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।এই ৮ টি গ্রহ ,উপগ্রহসমূহ ও সূর্যকে নিয়েই সৌরজগৎ।কতগুলো গ্রহ-উপগ্রহ ও সূর্যকে নিয়ে যেমন একটি নক্ষত্রব্যবস্থা বা সৌরজগৎ গঠিত হয়, তেমনি এরকম অসংখ্য নক্ষত্রব্যবস্থা নিয়ে গঠিত হয় একটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি।সূর্য যেমন পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহের আবাসস্থল ঠিক তেমনি গ্যালাক্সিগুলো হল নক্ষত্রদের আবাসস্থল।গ্রহগুলো যেমন সূর্যকে ঘিরে অবিরাম পাক খাচ্ছে,নক্ষত্রগুলোও ছায়াপথে তাদের আপন কক্ষপথে অবিরাম ঘূর্ণায়মান।আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ে হল এই রকম একটি ছায়াপথ।আর আমাদের সূর্য হল এই ছায়াপথের একটি সদস্য নক্ষত্র।
চাঁদহীন অন্ধকার রাতে মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকালে(বিশেষ করে শরৎ কালে,কারন এ সময় রাতের আকাশ পরিস্কার থাকে) অসংখ্য তারার এক মনমুগ্ধকর সমাহার দেখা যায়।শহরের আকাশে ধুলাবালির পুরু স্তর থাকায় গ্রামে অথবা মফঃস্বলে গেলে ব্যপারটা ভাল করে বোঝা যায়।যাহোক,এরকম অন্ধকার রাতের তারাখচিত আকাশে লক্ষ করলে দেখা যাবে আকাশের মধ্য দিয়ে এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে আলোর এক সুরু অস্পষ্ট কুয়াশার মত ধারা চলে গেছে। এটিই হল মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ।এই ছায়াপথটির আবার কতগুলো সুন্দর নাম আছে।যেমন -সুর গঙ্গা বা স্বর্গ গঙ্গা।গ্রিক পুরান মতে,দেবী জুনো যখন শিশু হারকিউলিক্স কে স্তন্য পান করাচ্ছিলেন তখন জুনোর বুক থেকে ছিটকে পরা দুধ থেকেই এই ধারার জন্ম।তাই এর নাম হয়েছে via lactea আর ইংরেজিতে বলে milky way।আমরা যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে বাস করছি তার ব্যাস ৯০০০০ আলোকবর্ষ(আলো এক বৎসরে যে পরিমান পথ চলে তাকে আলোকবর্ষ বলে)।আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৩০০০০০ কিঃ মিঃ।তাহলে বুঝতেই পারছেন কতটা বিশাল এই ছায়াপথ।আর এর কেন্দ্র থেকে আমাদের সূর্যের দূরত্ব ৮.৫ কিলোপারসেক(৩.২৬ আলোকবর্ষ=১ পারসেক & ১০০০ পারসেক=১ কিলোপারসেক)।ছায়াপথটি sb শ্রেণির।এটিতে নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ১০০বিলিয়ন।এর মোট দৃশ্যমান বস্তুর ভর প্রায় ২০০০০০০০০০০০ সৌরভরের সমান।যার মধ্যে ৮৭-৯০% হাইড্রোজেন ১০% হিলিয়াম,০-৩% ভারি মৌল।ছায়াপথটির আকার সর্পিল।মোটামুটি এই হল আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ।
এবার ছায়াপথ সম্পর্কে কিছু তথ্য।ছায়াপথ কয়েকটি আকার আকৃতির হতে পারে।তার মধ্যে উপবৃত্তাকার,কুণ্ডলাকার,সর্পিল অথবা অনিয়মিত।এখন কথা হল এ জাতীয় ভিন্নতার কারন কি?ধরে নেওয়া হয় যে,মহাবিশ্ব সৃষ্টির ২ থেকে ৩ বিলিয়ন বৎসর পরে বেশির ভাগ ছায়াপথ একই সাথে গঠিত হয়েছিল।মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রথম ৩ মিনিটে উৎপন্ন হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম মেঘ হল এসব নব্য ছায়াপথের গঠন উপাদান।আদিম এই মেঘ মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে সঙ্কুচিত হবার সাথে সাথে শত শত বিলিয়ন গোলাকৃতির গ্যাসীয় থলি ঘনতর হয়।নিজ মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে সঙ্কুচিত হয়ে এবং অন্তঃস্থিত গ্যাসীয় পদার্থের তাপমাত্রা গোটা দশেক মিলিয়ন ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়লে হাইড্রোজেন ভেংগে হিলিয়াম তৈরি হয় এবং পারমানবিক ফিউশান বিক্রিয়ার ফলে বিশাল ধরনের শক্তি নিঃসরিত হয়।এভাবে গ্যাসীয় গোলকগুলো শক্তি নিঃসরন করে আর পরিনত হয় নক্ষত্রে।আর গ্যাসীয় গোলকগুলো তার সমস্ত গ্যাসের কতটুকু পদার্থ নক্ষত্রে রুপান্তরিত করতে পারলো এতার উপর নির্ভর করে তার আকৃতি।
[plulz_social_like width="350" send="false" font="arial" action="like" layout="standard" faces="false" ]