ফ্রয়েড (Sigmund Freud), যার অবদান মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য, তিনি বিশ্বাস করতেন স্বপ্ন হলো অবচেতন মনের ভাবনা। এই তত্ত্ব আমরা অনেকেই জানি, হয়তো বিশ্বাসও করি, কিন্তু বিস্ময়কর সত্য হলো, এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে সক্ষম হননি। তাই স্বপ্নকে বৈজ্ঞানিকভাবে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করা এখনো সম্ভব হয়নি। স্বপ্ন এখনো রহস্যময় রয়ে গেছে, এমনকি বৈজ্ঞানিকদের কাছেও!
তবে ঘুমের আর.ই.এম. অংশের সাথে স্বপ্নের সম্পর্ক আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথেই স্বপ্ন নিয়ে গবেষণায় মানুষ অনেক দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। একটি বিষয়ে বেশীরভাগ গবেষক একমত, তা হলো সাধারণত মানুষের ঘুমের সময় আর.ই.এম. দ্বারা নির্দেশিত হয় যে, মানুষটি এখন স্বপ্নে মগ্ন।
১৯৫৩ সালে যখন অ্যাসেরিন্সকি (Eugene Aserinsky) নামধারী একজন গবেষক সর্বপ্রথম ঘুমন্ত বাচ্চাদের মধ্যে আর.ই.এম. (REM / Rapid Eye Movement) আবিষ্কার করেন, তারপরেই বৈজ্ঞানিকরা ঘুম এবং স্বপ্ন নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে গবেষণা শুরু করেন। শীঘ্রই তারা উপলব্ধি করেন যে অপরিচিত, অযৌক্তিক অভিজ্ঞতাকে আমরা স্বপ্ন বলে ডাকি তা প্রায়শঃ REM ঘুমের সময় ঘটে থাকে। তার আগে স্বপ্ন নিয়ে প্রচলিত অধিকাংশ তত্ত্বই ছিলো অনুমানের উপর ভিত্তি করে করা, যার কারণে সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
প্রসঙ্গত, আর.ই.এম. নিদ্রার একটি স্বাভাবিক পর্যায়, যে সময় অক্ষিগোলক দ্রুত আন্দোলিত হয়। আর.ই.এম. ঘুমের শনাক্তকারী অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মাঝে রয়েছে অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অস্বাভাবিক হার্টবিট, আকস্মিক পেশীতে টান পড়া ইত্যাদি। এ সময় মস্তিষ্ক থেকে লো-ভোল্টেজ ব্রেইনওয়েভ নিঃসরিত হয়, যা ইলেক্ট্রো-এন্সেফালোগ্রাফিক রেকর্ডিং [electroencephalographic recording (EEG)] এর মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।
মস্তিষ্কের যে অঞ্চল শেখার কাজে ব্যবহৃত হয়, আর.ই.এম. নিদ্রা তাতে উদ্দীপকের কাজ করে। তাই একে শৈশবকালে মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে অনুমান করা হয়। ধারণা করা হয়, এ কারণেই বাচ্চাদের আর.ই.এম. ঘুমের প্রবণতা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে বেশী।
ঘুমের প্রায় ২০% হলো আর.ই.এম ঘুম। আপনি যদি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান, তাহলে সম্ভবত তার দেড় ঘন্টা বা ৯০ মিনিট হবে আর.ই.এম ঘুম। আর.ই.এম. ঘুমের একটি নিদির্ষ্ট পর্ব হয়তো বিরতি দিয়ে ৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টাও চলতে পারে। কাজেই এক ঘুমে আপনার পক্ষে অসংখ্য ছোট ছোট স্বপ্ন দেখা যেমন সম্ভব, তেমনি একটি বড় স্বপ্ন দেখাও সম্ভব। যদিও তেমনটি খুব বেশী ঘটতে দেখা যায় না। বড় স্বপ্নের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে না, তা হয়ে পড়ে অসংলগ্ন। 
এ কারণে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, স্বপ্ন হলো আর.ই.এম. ঘুমন্ত অবস্থায় সেরেব্রাল কর্টেক্স (Cerebral cortex) অঞ্চলে প্রাপ্ত অনিয়মিত এলোমেলো সংকেতের অর্থ খোঁজার জন্য মস্তিষ্কের প্রয়াস। সচেতন অবস্থায় ব্রেইনের যে অংশ পরিপার্শ্ব থেকে তথ্য নিয়ে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, সেটিই কর্টেক্স। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ধারণা, যখন কর্টেক্স ঘুমের আর.ই.এম. পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন মস্তিষ্ক ক্রিয়ার সমন্বয় ঘটানোর প্রচেষ্টা করে, তার ফলে যে অদ্ভুত গল্পের সৃষ্টি হয়, তাকেই আমরা স্বপ্ন নামে অভিহিত করে থাকি।
কোনো একদিন স্বপ্ন নিয়ে সমস্ত তর্ক-বিতর্কের অবসান হয়তো হবে, হয়তো হবে না। রহস্যময় স্বপ্নকে ঘিরে থাকা রহস্য হয়তো রহস্যই থেকে যাবে। তবু স্বপ্নকে কেন্দ্র করে মানুষের আগ্রহের শেষ হবে বলে মনে হয় না!
[plulz_social_like width="350" send="false" font="arial" action="like" layout="standard" faces="false" ]
























![image[33]](https://bigganbangla.com/wp-content/uploads/2012/01/image33.png)














