আসুন জানি কিভাবে আমাদের মোবাইল কাজ করে !!

1851

মোবাইল ফোনের ব্যবহার ঠিক কবে থেকে শুরু হল তা ঠিক করে বলা মুশকিল। তবে প্রথম যে দুটি টেকনলজি এর পূর্বপুরুষ তা হল রোডিও ও টেলিফোন। এই দুটির সংমিশ্রন ও আধুনিক রুপই হল আজকের মোবাইল ফোন। গ্রাহাম বেল আবিষ্কার করেন টেলিফোন ১৮৭৬ সনে এবং এর ১৮ বছর পরে ১৮৯৪ সনে মার্কনি আবিষ্কার করেন রেডিও।

মোবাইল ফোন এর আগে যারা মোবাইল কমিউনিকেশন এর জন্য গাড়িতে রেডিও ফোন অনেকে ব্যবহার করতো। কিন্তু এটির সাইজ অনেক বড় হওয়াতে সহজে হাতে করে ঘুরে বেড়ান যেতনা। আর সাধারণত তা ২৫ টি মাত্র চ্যানেলের মাধ্যমে সেন্ট্রাল এন্টেনা এর সাথে যোগাযোগ করতো। তার মানে, রেডিও ফোন এর ট্রান্সমিশন ক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ মাইলের মত হতে হত। আর চ্যানেল সংখ্যা

কম হওয়ার কারণে এক সাথে অনেকে ব্যবহার করতে পারতোনা। এবার দেখা যাক বর্তমান মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে। বর্তমানে একটি শহর বা জায়গাকে মোবাইল কম্পানি অনেকগুলি সেল (Cell) এ ভাগ করে নেয়। সাধারণত প্রতিটি সেল ১০ বর্গমাইলের সমান ও ষষ্ঠভূজ হয়ে থাকে আর প্রতিটি সেলে একটি বেস ষ্টেশন থাকে। আর প্রতিটি সেলে ৮০০ টি Frequency তে কথা বলা যায়। যদিও মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য একটি শহরে অনেকগুলি টাওয়ার প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব বেশী হবার কারণে এর খরচ কম হয়ে যায় ও ব্যবসায়ীক ভাবে

সফল হয়। প্রতিটি শহরে একটি সেন্ট্রাল অফিস থাকে যা বেস ষ্টেশন বা টাওয়ার গুলির সাথে যোগাযোগ রাখে। এই সেন্ট্রাল অফিসগুলিকে Mobile Telephone Switching Office (MTSO) বলে। সেল মোবাইল ফোন ও বেস ষ্টেশন Low power transmissions ব্যবহার করে। ফলে মোবইল ফোন অল্পক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি দিয়ে চলতে পারে, যার ফলেই আজকের মোবাইল ফোন এত ছোট আকার হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হয়ত আরো ছোট হবে।

 

যখন আমরা মোবাইল অন করি তখন এটি কন্ট্রোল চ্যানেলের মাধ্যমে SID (System Identification Code) গ্রহণ করে এবং তা মোবাইল ফোনের ভিতরের এর সাথে মিলিয়ে দেখে। এছাড়া এটি MTSO এর সাথেও যোগাযোগ রাখে। সেন্ট্রাল অফিস মোবাইল ফোনের অবস্থান একটি ডাটাবেস এ রাখে। অর্থাত্‍ আপনি শহরের ভিতরে কখন কোন সেলে থাকছেন তা সেন্ট্রাল অফিস এর ডাটাবেসে থাকে। যখনই কেউ আপনাকে ফোন করে তখন এই সেন্ট্রাল অফিস তার ডাটাবেস থেকে বাহির করে আপনি কোন টাওয়ারের কাছাকাছি আছেন এবং সেই টাওয়ার থেকে আপনার মোবাইলের ফ্রিকোয়েন্সিতে যোগাযোগ করে দুইজনের সাথে যোগাযোগ করে দেয় এবং আপনি কথা বলতে পারেন।

মোবাইল ফোনের আরেকটি বড় সুবিধা হল আপনি গাড়িতে কিংবা অন্য কিছুতে চলমান থাকলেও কথা বলতে পারবেন। আপনি যখন কথা বলতে বলতে একটি সেল থেকে অন্য একটি সেলের দিকে এগুতে থাকেন তখন বর্তমানে ব্যবহার করা টাওয়ারটি থেকে দূরত্ব বেড়ে যাবার কারণে অন্য টাওয়ারটির সাথে সংযোগ স্থাপন করে, এর ফলে আপনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে গেলেও

নির্বিঘ্নে আপনার কথোপথন চালিয়ে যেতে পারেন। আপনারা একটু খেয়াল করলেই দেখবেন টাওয়ারের উপরে সাদা লম্বা লম্বা চারটা বক্স এর মত আছে - কোনটা সোজা ,কোনটা একটু সামনের দিকে হেলানো আবার কোনটা পিছনের দিকে হেলানো। আমাদের মোবাইলে যে ফ্রিকোয়েন্সি আমরা পাই সেটা ঐ সাদা বক্স থেকেই আসে। সেগুলি একেকটা একেকদিকে হেলানো; এর কারণ হল যেটা সামনের দিকে হেলানো সেখানে মোবাইল ইওজার বেশি আর যেটা সোজা সেখানে ইউজার মোটামোটি আর যেটা পিছনে হেলানো সেখানে ইউজার কম। আর সাদা গোল গোল ছোট বড় কিছু বস্তু রয়েছে সেগুলির কাজ হল এক টাওয়ার থেকে আরেক টাওয়ারে ফ্রিকোয়েন্সি আদান প্রদানের জন্য। মোবাইল দেখতে ছোট হলে কি হবে এক মুহুর্তের মধ্যে এত কিছু করে ফেলতে পারে কারন এর ভিতরে রয়েছে DSP(Digital Signal Processor)। এর কারণেই আজকের মোবাইল এত স্মার্ট হয়েছে!

 

আরেকটা কথা না বললেই না, সেটা হল মোবাইল ফোন ডুপ্লেক্স চ্যানেল (Duplex channel) ব্যবহার করে। আপনি হয়তোবা চিনেন ওয়াকিটকি যা পুলিশ সার্জেন্টরা ব্যাবহার করে। এই ওয়াকিটকি সিঙ্গেল চ্যানেল ব্যাবহার করে। যার ফলে শুধু মাত্র কথা বলা কিংবা শোনা সম্ভব। এক সাথে দুইজনেই কথা বলা ও শোনা সম্ভব নয়। যেমন ওয়াকিটকি তে সার্জেন্টরা কথা বলা শেষ করে ওভার শব্দটি বলে, তা শুনে অপর পক্ষ তখন কথা বলে কিন্তু মোবাইল ফোনে ডুপ্লেক্স চ্যানেল ব্যাবহার করার কারণে আপনি ফোনের মতই এক সাথে কথা বলতে ও শুনতে পারেন।

 

Source- http://probarta.com/

 

লিখাটি নিয়ে আপনার অভিমত কি?

1 COMMENT

  1. এই পোস্টটা পড়ে খুব সহজেই বুঝে ফেললাম মোবাইল ফোন কি করে কাজ করে...
    পাঠ্যবইয়ে এতো সহজ করে লেখা হয় না কেনো??? 🙁