কিলার হোয়েল বা খুনী তিমি মূলত ‘অরকা’ নামেই বেশি পরিচিত। এটি মহাসাগরীয় ডলফিন পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্য এবং অন্যতম শিকারী প্রানী। প্রায় সব মহাসাগরেই কম-বেশি এদের দেখা মেলে। এমনকি আর্কটিক এবং এন্টার্কটিক এর বরফ ঢাকা অঞ্চলেও এদের দেখা যায়। এরা যদিও মানুষের বন্ধু হিসেবেই বেশি পরিচিত তবে নিঃসন্দেহে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী শিকারী প্রানীগুলোর মধ্যে একটি।
তিমি এবং ডলফিন দুই প্রজাতির বৈশিষ্টযুক্ত কিলার হোয়েল উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট একটি স্তন্যপায়ী প্রানী। আকৃতিতে এটি ২০ থেকে ৩২ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওজন সর্বোচ্চ ৬ টন পর্যন্ত হয়। এর পিঠের দিকটি কালো এবং বুকের ও পাশের কিছু অংশ সাদা হয়ে থাকে। এর পিঠে থাকা ফিনটি সর্বোচ্চ ৬ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। দুই সারিতে থাকা ৪৮টি দাঁত সর্বোচ্চ চার ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। বিশাল আকৃতি, শারীরিক গঠন এবং শক্তিশালী দেহের কারনে এরাই সমুদ্রের সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন স্তন্যপায়ী প্রানীতে পরিনত হয়েছে। এরা একদিন সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমন করতে পারে। ভ্রমন করার সময় গতি বৃদ্ধি করার জন্য এরা প্রায়ই এদের দেহকে পানির উপরে নিয়ে আসে।

মোটামুটি তিন ধরনের কিলার হোয়েল রয়েছে এবং এগুলো একেকটি একেক ধরনের খাবার পছন্দ করে। এরা মূলত অন্য প্রজাতির ম্যামালস যেমনঃ সীল, সি লায়ন, এলিফ্যান্ট সীল, তিমি ইত্যাদি এবং মাছ খায়। মাছের মধ্যে হেরিং, শ্যামন, টুনা ইত্যাদি সহ প্রায় ৩০ প্রজাতীর মাছ এদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও এরা স্কুইড এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক পাখিও খেয়ে থাকে। অনেক সময় কয়েকটি কিলার হোয়েল একত্রে বড় আকৃতির তিমিকেও আক্রমন করে। শিকার দ্বারা ঘটা দূর্ঘটনা এড়াতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরা শিকারকে খাওয়ার পূর্বে পুরোপুরি দুর্বল করে নেয়। এর জন্য অনেক সময় শিকারকে এরা বাতাসে ছুঁড়ে মারে অথবা লেজ দিয়ে বাড়ি মারে।
মা অরকা ১৫ বছর বয়স থেকে বাচ্চা প্রসব করা শুরু করে। প্রায় ১৭-১৮ মাস গর্ভ ধারনের পর বাচ্চা হয়ে থাকে। জন্মের পর প্রথম ৬ মাস বাচ্চাগুলো খুবই নাজুক অবস্থায় থাকে এবং প্রায় ৩০ থেকে ৫০ ভাগ বাচ্চা এই সময়কালে মারা যায়। মা অরকা সাধারনত প্রতি ৩ থেকে ৫ বছরে একটি বাচ্চা প্রসব করে। অরকাদের জীবনকাল সাধারনত ৫০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কিলার হোয়েলরা খুবই বুদ্ধিমান এবং সামাজিক প্রানী। এরা সামাজিক দল তৈরি করে বসবাস করে এরং সবার মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য এরা বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে যা অন্যান্য সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের চাইতে উন্নত। প্রশিক্ষন এর মাধ্যমে এদেরকে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করানো যায়। মেরিন ম্যামাল পার্কের ওয়াটার এক্সিবিশনে কিলার হোয়েলদের বুদ্ধিমত্তা এবং শারীরিক ক্ষমতা আপনারা অনেকেই হয়তো টিভিতে দেখেছেনও। অরকা নিয়ে তৈরি করা একটি মুভিও দেখতে পারেন ইচ্ছে করলে Stagevu তে।
তথ্যসূত্র: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
[plulz_social_like width="350" send="false" font="arial" action="like" layout="standard" faces="false" ]