ক্যাম্পাসের এক কোনায় (মুগ্ধতা!)

এখন বিকেল ৫.৩৮। এই মুহূর্তে যে যায়গায় বসে আছি তা আমার কাছে স্বর্গের একটুকরো মনে হচ্ছে। জানিনা আমি স্বর্গ এর থেকে কতটুকু সুন্দর। তবে এইরকম একটি পরিবেশ পেলে তাতেই  আমি খুশি।

আমি বসে আছি একটি বড় পুকুরের ঘাটে। পুকুরের পানি অনেক স্বচ্ছ এবং নীলচে সবুজ। সমুদ্রের মত মনে হচ্ছে। আছে হালকা ঢেউ এর খেলা। পুকুরে অনেক মাছ দেখা যাচ্ছে, অনেকটা একুরিয়ামের মত। ছোট বড় অনেক রকমের মাছ।  আমার ডানপাশে কিছুটা জমি। তার ওপারটা দিগন্তে মিশে আছে মনে হচ্ছে।

---শুধু এইটুকু দেখেই মুগ্ধ হয়ে থাকা যায়। এইটুকুই হতে পারে অনেক কিছু। কিন্তু এ যে স্বর্গের টুকরো। তাই এখানেই শেষ নয়।

মাত্র সামনে দিয়ে উড়ে গের এক ঝাঁক সাদা বক। গিয়ে বসলো কতগুলো আকাশী গাছের মাথায়। আকাশী গাছ নাকি আকাশ ছুঁতে চায়। বকগুলোকেও তাই মনে হচ্ছে। বকগুলো বসার সাথে সাথে বাতাসের ঢেউয়ের মত নেমে এলো এক ঝাঁক ছোট পাখি।

ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি। আমার বামপাশে ছোট্ট একটি বনের মত আছে। বনের বেশিরভাগ গাছই আকাশী গাছ। তবে কিছু নারিকেল এবং নাম না জানা আরও অনেক গাছ আছে। কিছু কাশফুলের গাছও আছে যদিও তা শুকিয়ে গেছে।

আমার ক্যাম্পাসের ক্ষুদ্র স্বর্গের প্রধান অংশই হলো এই গাছগুলো। কারণ এইগাছগুলোতে আছে হাজার হাজার পাখি। কিছুদিন আগেও এখানে ছিল নানান অতিথি পাখি। চারদিকে শুনতে পাচ্ছি পাখিদের কিচিরমিচিরের শব্দ। এই সংগীতের কি কোন তুলনা হয়?

আকাশটা ছেয়ে গেছে পাখি দিয়ে। ঝাঁক বেঁধে পাখিরা আকাশে আকাশে উড়তেছে। বিশেষ করে পুকুরের উপরে। সারাদিন নানান জায়গায় ছুটাছুটি করে এই সময়ে সবাই নীড়ে ফিরছে। ঝাঁকে ঝাঁকে আসতেছে নানান দিক থেকে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।

 

মাত্র একটি পানকৌড়ি পুকুরে ডুব মারলো। নির্গাত কিছু না কিছু ধরে নিয়ে আসবে। চারদিকে প্রাণবৈচিত্রের অপূর্ব এক সমারোহ এখানে।

ঝাঁক বাঁধা পাখির গতিপথ পরিবর্তন! আর উপর থেকে নিচে নামা পাখিদের ঝাঁক!

---দেখলে মনে হয় গাছের পাতা হঠাৎ বাতাসে একদিকে উড়ে যাচ্ছে কিংবা নিচে ঝরে পড়তেছে।

আমাদের ক্যাম্পাসটি চরের মাঝে। তাই বলা যায় সমতল একটি ভূমি। কিন্তু এখানে প্রকৃতি এত সুন্দর, এত মনোরম তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।

পুকুরের পাড়ের চারদিকে কিছু গাছ আছে। আমরা এগুলোকে ধইঞ্চা বলে ডাকি। বই-পুস্তকে কি নাম আমার টা জানা নেই। তবে অনেকটা পাট গাছের মত। আবার কিছু গাছ আছে পাতা ঝরে গেছে শীতকালে। এখন পাতা বলে আর কিছু নাই। পুকুর পাড়ে আমি যেদিন প্রথম আসি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। দূর থেকে মনে হচ্ছির গাছগুলোতে অনেক পাতা। কিন্তু কাছে এসে দেখি পাতা কোথায়, গাছে ভর্তি অনেক অনেক ছোট ছোট পাখি। :-

প্রকৃতির কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার নোকিয়া এন৭০ ব্যর্থ হলো এই প্রকৃতির রূপ ধারণে। পুকুরের ওই পাড়ে দুইজন লোক দেখতেছি ভালো ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা হাতে। মনে হচ্ছে আমার সিনিয়র। যদি ওনাদের কাছে কোন ভালো ছবি পাই তাহলে ভালো হতো। দেখতে হবে পাই কিনা।

যাই সন্ধ্যা নেমে গেছে। পাখিরা সব নীড়ে ঢুকে গেছে। আমিও আপন নীড়ে ফিরে যাই।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

উপরের লিখাটুকু আজ সন্ধ্যায় আমি লিখেছিলাম আমাদের ক্যাম্পাসের একটি কোণায় বসে ওইসব দেখতে দেখতে। পরে শেয়ার করতে ইচ্ছে করলো। ভাইয়াদের কাছে ছবি পেয়েছি। ছবিগুলো তাই মাঝে মাঝে দিলাম। আসলে ছবি দিয়ে এই প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা যায় না। তথাপি দিলাম। যদি পারেন তো ঘুরে যাবেন আমার ক্যাম্পাসে, ক্যাম্পাসের এক কোণায়, ক্ষুদ্র প্রকৃতির এক টুকরো স্বর্গে ।

-- মোঃ ইয়াসিন কবির।

-- নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

লিখাটি নিয়ে আপনার অভিমত কি?

1 COMMENT

  1. আমার কাছে আমাদের ক্যাম্পাসের আরেকটা ব্যাপার সবচাইতে ভালো লাগে। সেটা হল নয়নাভিরাম আকাশ! আমি এর আগে কখনো আকাশের এত সুন্দর রূপ দেখিনি কোথাও!! সূর্যাস্তের সময় বিশেষ করে যেন মনে হয় আকাশে কেউ জলরঙ দিয়ে নকশা করেছে। তাছাড়া টকটকে লাল সূর্যটাও যেন আকাশের রঙের সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার জন্যই এমন রূপ নেয়। আর পুকুর ঘাটের বাতাস এবং অতিথি পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ এক কথায় চমৎকার লাগে! আসছি আমি অতিশীঘ্রই আমার প্রিয় ক্যাম্পাসে.. 🙂